কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার এবং কি কি চলুন জেনে নিই।

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার এবং কি কি চলুন জেনে নিই।

একটি সময় ভাইরাস শব্দটি শুধুমাত্র জীববিজ্ঞান কিংবা মানবদেহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শব্দ হিসেবে আমরা ব্যবহার করতাম।

কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন, পেনড্রাইভ, ইত্যাদির সঙ্গে ভাইরাস শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে।

কম্পিউটার ভাইরাস শব্দটি প্রায় সবার কাছেই সুপরিচিত কিন্তু এটি আসলে কি? কিভাবে ক্ষতি করে? ক্ষতি থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব? কিংবা কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার?

সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। 

এই ভাইরাস গুলি আপনার কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ফোন বিকল করার জন্য যথেষ্ট।

প্রত্যেক ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ বিভিন্ন হয়।

যার ফলে এদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির প্রকৃতি ও বিভিন্ন ধরনের।

আজ আপনাদের সামনে আলোচনা করব যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো- 

  • কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার এবং কি কি?
  • কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে?
  • কম্পিউটার ভাইরাস এর পূর্ণরূপ কি?
  • প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের জন্ম হয় কিভাবে?
  • কম্পিউটার ডিভাইসকে ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার উপায়

তো চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার

১. বুট ভাইরাস:-

এই ধরনের ভাইরাসগুলি ফ্লপি বা হার্ড ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমন করে বুট সেক্টর মধ্যস্থ মাস্টার বুট প্রোগ্রামটিকে নষ্ট করে দেয়।

এরফলে সিস্টেমটিকে বুট হতে বাধা দেয়।

উদাহরন:- 

  • Friday 13
  • Stone Virus 
  • Disk Killer

 

২.ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস:-

এই ভাইরাসগুলি কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের সিস্টেম ফাইল

যেমন- .exe, .com, .sys 

 

উদাহরন:-

  • Cascade
  • Sunday
  • Acid Rain
  • TroJon

 

৩. ফ্যাট ভাইরাস:-

এই ভাইরাসগুলি ডিক্স মধ্যস্থ FAT কে আক্রান্ত করে ডিরেক্টরীর ভেতরের কোনো ফাইলের তথ্য বা পুরো ডিরেক্টরীর সমস্ত ফাইল নষ্ট করে দেয়।

উদাহরন:-

  • Link virus 

 

৪. রেসিডেন্ট ভাইরাস:-

এই ভাইরাসগুলি কম্পিউটারের প্রধান মেমোরী কে আক্রমন করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মেমোরীর দখল নেয়।

ফাইল Corrupt করে দেয় এবং সিস্টেমের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

এর ফল স্বরুপ ফাইল খোলা, বন্ধ করা, কপি করা, রি-নেম করা ইত্যাদি কাজ বাধা প্রাপ্ত হয়।

উদাহরন:-

  • CMJ
  • Randex

 

৫. ম্যাক্রো ভাইরাস:-

যে সকল অ্যাপ্লিকেশান বা প্রোগ্রাম ফাইলগুলির মধ্যে ম্যাক্রো বর্তমান সেই সব অ্যাপ্লিকেশান বা প্রোগ্রাম এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। 

ম্যাক্রো ভাইরাস দ্বারা উক্ত প্রোগ্রামগুলি সংক্রামিত হলে সেগুলির কাজে বিঘ্ন ঘটে বা ফাইলগুলি নষ্ট হয়ে যায়।

উদাহরন:-

  • y2k
  • W97M
  • Relax 

কম্পিউটার ভাইরাস এর পূর্ণরূপ এবং কম্পিউটার ভাইরাস কি?

ভাইরাস আসলে কয়েকটি শব্দের সংক্ষিপ্ত একটি রূপ , ভাইরাস শব্দটির পূর্ণরূপ হল ভাইটাল ইনফর্মেশন রিসোর্স আন্ডার সাইজ।

এই পূর্ণরূপ এর মধ্যেই ভাইরাস শব্দটির পরিচয় লুকিয়ে রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এমন কিছুকে বলা হয় ভাইরাস। 

আরো বিস্তারিত ভাবে বললে বলা যেতে পারে যা কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করে কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও তথ্য মুছে দিতে পারে। অথবা ফাইল নষ্ট করে দিতে পারে।

ডিভাইসটিকে স্ট্রোক করে দিতে পারে, কিংবা ডিভাইসের উপর থেকে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে পারে।

এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সহজে গমন করতে পারে এমন ধরনের প্রোগ্রাম গুলি কম্পিউটার ভাইরাস।

প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস সৃষ্টি হয় কিভাবে?

প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের জন্ম হাজার ১৯৮৩ সালের ১০ ই নভেম্বর।

*ফ্রেন্ড কোহেন* নামে একজন লোকের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে ছাত্র ছিলেন তিনি।

তিনি প্রথম পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রদর্শন করেন।

তিনি তার তৈরিকৃত প্রোগ্রাম একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

তার তৈরিকৃত প্রোগ্রামটি নিজ থেকে নিজেই অনুলিপি সৃষ্টি করতে পারত, সেই থেকে কোহেনের উদ্ভাবিত প্রোগ্রামটির নাম কম্পিউটার ভাইরাস হয়ে যায়।

 

তবে অনেকেই মনে করেন কম্পিউটারের ভাইরাস আরো আগে থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।

তাদের মতে রিসট ক্রেন্টা নামক ১৫ বছরের যুবক তার বন্ধুদের সঙ্গে মজা করার জন্য হাজার ১৯৮২ সালে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন।

যা ফ্লপি ডিস্ক এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে সংক্রমিত করেছিল।

আবার কেউ কেউ মনে করেন ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে ভাইরাস তৈরি করেন *রবার্ট থমাস* যে ভাইরাসটির নাম ছিল ক্লিপার।

এটিও নিজে থেকে নিজে অনুলিপি তৈরি করতে পারত তবে এটি পরীক্ষামূলক ছিল বলে মনে করা হয়।

কম্পিউটার ভাইরাসের ধরন কত প্রকার?

কম্পিউটারে ভাইরাস এর ধরন অনেকটা মানবদেহের ভাইরাসের মতই।

মানুষের শরীরের যেমন একজন থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হয়।

তেমনি কম্পিউটারের ভাইরাস ও এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্রামিত হয়।

মানব শরীরের ভাইরাস আঁকারে ছোট ও ক্ষতিকর তেমনি কম্পিউটারের ভাইরাস ও আকারে ছোট ও কম্পিউটারের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

সময়ের পরিক্রমায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কৃত হচ্ছে।

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার এবং কি কি ধরনের?

চরিত্র ও খোত্রের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস রয়েছে।

     যেমন:-

  • ১. ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস)
  • ২. মাইক্রো ভাইরাস 
  • ৩.রেসিডেন্ট ভাইরাস 
  • ৪. ফ্লাগ ভাইরাস
  • ৫. ক্লিপার ভাইরাস

 

উপরের ভাইরাসগুলো সহ আরো অসংখ্য নামে-বেনামে ভাইরাস রয়েছে।

এর মধ্যে ব্রেইন ভাইরাস কে আবিষ্কার করেন পাকিস্তানের লাহোরে ১৯ বছর বয়সী প্রোগ্রামার বাসেত ফারুক আলোভি ও তার ভাই আমজাদ।

১৯৮৬ সালে বানানো বুট সেক্টর ভাইরাস দ্য ব্রেন।

আইবিএমের পিসিতে চলার জন্য তৈরি ভাইরাসের মধ্যে এটিই প্রথম।

কম্পিউটার ডিভাইসকে নিরাপদ রাখার উপায়।

যদি কোন কারণে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ডিভাইসটি ভাইরাস মুক্ত করে ফেলতে হবে।

আপনার কম্পিউটার টি ভাইরাসমুক্ত রাখতে নিম্ন পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

১. আপনার কম্পিউটার একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারেন, চেষ্টা করবেন পেট প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে। ডিভাইসে এসব এন্টিভাইরাস কোন একটি থাকলে সাধারণত ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না।

 

২. ইন্টারনেট ব্যবহার করার এন্টিভাইরাস কাজ নাও করতে পারে তবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় জন্য ভাইরাস ঢুকতে না পারে সেজন্য ইন্টারনেট সিকিউরিটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

৩. উইন্ডোজ সবসময় আপডেট রাখার চেষ্টা করতে হবে।

অপরিচিত কোন ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কম্পিউটারে পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কখনোই ভাইরাসযুক্ত পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড কম্পিউটারে প্রবেশ করানো যাবে না।

 

৪. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস দ্বারা তৈরি করে তারা অন্যের কম্পিউটারের ক্ষতি অথবা নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তাদেরকে আইডির ভাষায় হ্যাকার বলা হয়।

 

সর্বশেষ কথা:- সম্মানিত পাঠক আশা করছি আপনি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন যে কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার, এবং কম্পিউটারের আরো খুঁটিনাটি তথ্য। 

যদি আজকের এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করে দিতে একদম ভুলবেন না। 

কারণ এমনটা হতেও পারে আপনার বন্ধু ও হয়তো কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার তা জানতে আগ্রহী।

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সেই প্রত্যাশাই আজকের মত আল্লাহ হাফেজ।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

মুহাম্মদ ফিরোজ

কালো পিপড়া ! শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি, গাইডলাইন এবং জবস-ক্যারিয়ার, জানা-অজানা সকল তথ্যমূলক প্রতিবেদন ও লার্নিং প্লাটফর্ম।

ফেইসবুকে আমরা

আজকের দিন-তারিখ

  • মঙ্গলবার ( রাত ১২:৩৮ )
  • ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৩ ইং
  • ২৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ( হেমন্তকাল )